শিবালয় উপজেলার আরিচায় যমুনা নদীর তীরবর্তি এলাকায় হিন্দু ধর্মীয় উৎসব বারুনী স্নান অনুষ্ঠিত হয়েছে। যথারীতি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ৬ এপ্রিল ২০২৪ সকাল থেকে হাজার হাজার পূণ্যার্থী নারী-পুরুষ এ স্নানোৎসবে অংশ নেন।
শিবালয় ইউনিয়ন পরিষদ ও বন্দর ব্যাবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতি এ উৎসব পরিচালনা করছে। সার্বিক সহযোগীতায় রয়েছে বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ, জাতীয় হিন্দু মহাজট ও শিবালয় সার্বজনীন মন্দির কমিটি।
এদিকে এ স্নানোৎসবকে ঘিরে শনিবার থেকে ৩ দিনব্যাপী মেল শুরু হয়েছে। প্রতিবছর ৩ দিনব্যাপী এ মেলা হওয়ার কথা থাকলেও আবহাওয়া ও সার্বিক পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে সাতদিন পর্যন্ত মেলা চলতে পারে। এবারও অনুকুল পরিবেশ থাকলে মেলা সাতদিন চলবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
আরিচার যমুনা নদীর তীরে বসা ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় হ্যান্ডিক্রাফট, খেলনা, প্রসাধনী, সাজ-সজ্জার নানা দোকান, কাঠ,বেত, মাটি, লোহার তৈরী আসবাবপত্রসহ গৃহকাজে ব্যবহার্য্য সামগ্রীর দোকান, মিষ্টি, বিন্নি, খৈই, আখড়া, সাজ, বাতাসাসহ নানা ধরনের খাদ্য সামগ্রীর দোকান বসেছে এ মেলায়।স্নান করতে আসা অসিত কুমার দত্ত বলেন, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনেছি এই স্নানের মাধ্যমে পাপ মোচন হয়। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে স্নান করতে এসেছি।
শিবালয় বন্দর ব্যাবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রায় দু’শ বছর ধরে এ বারুনী স্নান ও মেলা আরিচায় যমুনার তীরে অনুষ্টিত হয়ে আসছে। এ উৎসব হিন্দু ধর্মালম্বীদের হলেও মেলাকে ঘিরে হিন্দু-মুসলমানদের সোহার্দ্যপূর্ণ মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। আগত পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের বন্দর সমিতি,ইউনিয়ন পরিষদ, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। স্নান করতে আসা প্রত্যেক পূণ্যার্থীদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া দুর-দুরান্ত থেকে আসা পূর্ণ্যার্থীদের জন্য পোষাক বদলানোসহ সকল ধরণের সুব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
শিবালয় উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রথীন সাহা বলেন,আমি বাংলাদেশ পুঁজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত অনুরোধ করছি যেভাবে লাঙ্গল বন্দে বিভিন্ন স্নানের জন্য ঘাট করে দেয়া হয়েছে, সেভাবে আমাদের শিবালয়ের এই বারুনী স্নানের জন্য একটি স্থায়ী ঘাট করে দেয়া যায় তাহলে সাংবাৎরিকভাবে স্থানীয় জনগণ সুপেয় জল ও স্নান করতে পারবে। এছাড়া এই পূর্ণতিথিতেও আগত আমাদের পূর্ণার্থীগণ সুন্দরভাবে স্নান করতে পারবে। আমি আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অতি গুরুত্বসহকারে দেখবে। আমি বিশেষ করে অনুরোধ করব অত্যান্ত জনপ্রিয় মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ সাহেবকে। আপনার মাধ্যমে আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে চাই যেন আমাদের এই সনাতনিদের দাবীটা অচিরেই পুরণ হয়।পৌরিহিত নারায়ণ চক্রবর্ত্তী (নারায়ণ ঠাকুর) বলেন, চত্রিমাসের মধু কৃঞ্চ ত্রয়োদশ তীথিতে এই মহা গঙ্গা-বারুনী স্নান অনুষ্টিত হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও শনিবার সকাল ৭টা ৫৩ মিনিট থেকে এই মহা বারুনী গঙ্গা স্নান শুরু হয়েছে চলবে বেলা ১টা পর্যন্ত। আরিচা ঘাটের এ বারুনী স্নান প্রায় ২শ’ বছরের ঐতিহ্য। এ মেলায় ভারতের কলিকাতা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, পাবনা, ফরিদপুরসহ পার্শ্ববর্তি বিভিন্ন এলাকা থেকে পূণ্যার্থীরা আসেন এই মাহা বারুনী গঙ্গা স্নানে।
শিবালয় বন্দর ব্যবসায়ী সমাজ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: দুলাল হোসেন জানান, শনিবার বারুনী স্নান উপলক্ষে আরিচার যমুনার পাড়ে বসা স্নান ও মেলায় আগত পূণ্যার্থী, দর্শনার্থী এবং দোকানীদের জন্য বন্দর সমিতির পক্ষ থেকে পাহারাদার ও চকিদার দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া শিবালয় থানা পুলিশ এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশও সার্বিক নিরাপত্তার দায়ীত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।সকলের সহযোগীতায় আমরা এ ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
শিবালয় ৩নং মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো: আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, আমাদের শিবালয়ে প্রায় ২শ’ বছরের ঐতিহ্য এ বারুণী গঙ্গা স্নান।এ স্নান হিন্দু ধর্মালম্বীরা উদযাপন করে থাকে। আমরা শিবালয় ইউনিয়ন পরিষদ ও বন্দর ব্যাবসায়ী সমিতি’র পক্ষ থেকে সহযোগীতা করে থাকি। এবারের স্নান ভালভাবে হয়েছে এবং মেলাও সুন্দর ও সফলভাবে হবে এটাই আমি সকলের কাছে প্রত্যাশা করছি।